(এক)
“ভাই, আমার শালার জন্য একটা পাত্রী দরকার , আপনার জানা শোনা কেউ থাকলে বলবেন।” ।
“খালাম্মা , আপনার জানা শোনা কোন পাত্রী আছে, বিয়ে শাদী করবো ” কোন বিবাহ করতে ইচ্ছুক যুবক বা বিবাহ দিতে ইচ্ছুক যুবক বা যুবতীর অভিভাভবকের কাছ এই টাইপের কথার সম্মুখীন মোটামুটি তরুণ থেকে শুরু করে মুরুব্বি আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সবাই হয়।
বিয়ে এবং বিয়ের ক্ষেত্র তৈরি সমাজ জীবনের একটা অপরিহার্য অংশ।
আর উভয় পক্ষের আশা ভরসার প্রতীক ঘটক কিংবা মুখরা প্রাণচঞ্চল কোন আত্মীয়।
আবার কেউ কেউ একটু আগ বাড়িয়ে মিডিয়া বা দৈনিক পত্রিকার শরণাপন্ন হন।
একজন বিবাহযোগ্য পাত্রীর মধ্যে কি কি গুন তার ভালো পাত্রী হওয়ার মাপকাঠি?
এই একটি প্রশ্নের উত্তর বের করতে পারলেই বের হয়ে যায় সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির আসল স্বরূপ।
যেহেতু আমাদের সমাজে একটি মেয়ে জন্মের পর থেকেই তাকে পাত্রস্থ করার জন্য তৈরি করা হয় সুতরাং সমাজের কাছে উপযুক্ত বিয়ের পাত্রীর আদর্শ মাপকাঠি দিয়ে মাপা যায় সমাজে নারীর অবস্থান , এই নারী স্বাধীনতার যুগে কোন পর্যায়ে আছে! দৈনিক পত্রিকা সমূহে বিবাহ বিজ্ঞাপন পাত্র/ পাত্রী চাই এর উপর গবেষণা করেছেন ডক্টর কাবেরি গায়েন।
১৯৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত ৪৪৬ টি বিবাহ বিজ্ঞাপনের উপর এই গবেষণা করেন তিনি। তার এই অসাধারণ গবেষণায় উঠে এসেছে সমাজে নারীর মূল্যায়নের এক বাস্তবিক উপাখ্যান।
গবেষণায় দেখা গেছে- সবচেয়ে কাঙ্খিত পাত্রী সে যার গায়ের রং ফর্সা। ৪৪৬ টি বিজ্ঞাপনের মধ্যে ২২০ টি বিজ্ঞাপনে অর্থাৎ ৪৯.৩২ ভাগ বিজ্ঞাপনে সরাসরি ত্বকের রং ফর্সা উল্লেখ করা হয়েছে। মাত্র ১৩ টি বিজ্ঞাপনে পাত্রী পক্ষ পাত্রীর শ্যামলা রঙ্গের কথা উল্লেখ করেছে।
সুন্দরী , প্রকৃত সুন্দরী, অসামান্য রূপসী, রূপসী, অপূর্ব সুন্দরী এইধরনের বিশেষণ ব্যবহার করে সৌন্দর্যকে বিজ্ঞাপিত করা হয়েছে ২২২ টি বিজ্ঞাপন, অর্থাৎ ফর্সার চেয়েও বেশী, ৪৯.৭৬% ভাগ বিজ্ঞাপনে।
অপরদিকে পাত্রী পক্ষ একটি মাত্র বিজ্ঞাপনে সুদর্শন পাত্র চেয়েছেন।
অর্থাৎ- পাত্রী এবং পাত্র পক্ষ নির্বিশেষে সকলেই মনে করে বিয়ের পাত্রীকে অবশ্যই সুন্দরী হতেই হবে, কিন্তু পুরুষের সৌন্দর্য নিয়ে অন্তত পাত্রী পক্ষের মাথা ব্যাথা নেই। মোট ৮৬ টি বিজ্ঞাপনে সরাসরি লম্বা স্লিম বিশিষ্টক ব্যবহার করা হয়েছে। যা দৈহিক সৌন্দর্যের একটি সূচক। শুধু তাই নয়, পাত্রীর কাঙ্খিত উচ্চতা ও বলে দেওয়া হয় ইঞ্চি ফুট সমেত।
আরেকটি সূচক স্বাস্থ্যবতী। অর্থাৎ কোনভাবেই মেয়েটির দৈহিক সৌন্দর্যের কোন দিকই যেন ভুলক্রমে বাদ না পড়ে তাই ৪৯.৭৬% বিজ্ঞাপনে স্বাস্থ্যবতী মেয়ে চাওয়া হয়েছে।
৪৪৬ টি বিজ্ঞাপনের মাত্র ৪৪ টিতে ভদ্র নম্র মার্জিত পাত্রী চাওয়া হয়েছে, অবশ্যই সুন্দরীও হতে হবে সেই পাত্রীকে। মোট ৪৮ টি বিজ্ঞাপনে ধার্মিক মেয়ে চাওয়া হয়েছে, যা শতকরার হিসেবে মাত্র ১০% !
১০০ বছর আগে এমা গোল্ডম্যানের একটি বিখ্যাত উক্তির কথা মনে পড়ে-
পুরুষের আয় আর নারী সম্পর্কে সে দেখতে সুন্দর কিনা এর চেয়ে বেশী কি জানবার আছে?
গবেষণার সুবিধার জন্য যদিও সুন্দরী, ফর্সা, লম্বা, স্বাস্থ্যবতী এসব ভাগে ভাগ করা হয়, কিন্তু মূলকথা একটাই দাড়ায়- সেটা হোল দৈহিক সৌন্দর্য এগুলো ভাষার অলংকার, এই অলংকারকে তুলে নিলে যা থাকে তা হোল নারীর দেহ।
বিয়ের বাজারে নারী একধরণের পণ্য। এই পণ্যের দাম নির্ভর করে অন্য পণ্যের সাথে তুলনায় কতো সুন্দর সেই হিসেবে। আর যে ছেলের পকেট যতো ভারি, সে বাজার থেকে ততো বেশী টান দিতে পারবে সুন্দর পণ্যটি তুলে নিতে।
সবাই ফর্সা মেয়ে চায় কারন সাম্রাজ্যবাদীদের প্রকোপে ফর্সা মানেই সুন্দর এই ধারনা দেশে দেশে গেঁড়ে বসেছে।
সব সমাজেই দেখা যায় কালো মেয়েরা সামাজিক, পারিবারিক , রাজনৈতিক দিক থেকে অদৃশ্য, অথচ নির্যাতনের একদম কেন্দ্র বিন্দু। কাবেরি গায়েনের মতে- তারা সমাজের তলানি।
মলয় রায় চৌধুরীর মতে-" একটি পরিবার যতো ধনী হতে থাকে, তেমন তেমন ফর্সা নারীর সংখ্যা ও বাড়তে থাকে। কালো মেয়ের সংখ্যাধিক্য হয় দরিদ্র পরিবারে। ফর্সা মানে অভিজাত, কালো মানে অনভিজাত। ফর্সা মানে দেবী, আর কালো মানে অসুরকন্যা। সিনেমা থিয়েটারে কেনই বা কালো নায়িকা দরকার হলে ফর্সা সুন্দরী নায়িকাকে কালো রং মাখিয়ে নামানো হয়! কালোর কাছে ফর্সা হোল পিতৃতান্ত্রিক।"
(দুই )
এমন কাউকে ঠেলে দিচ্ছেন না তো যে হয়ত ড্যাশিং সুন্দরী নন !
ভাই, আপনি মনজুড়ানো সুন্দরী বউ খুঁজছেন? এমন কাউকে ঠেলে দিচ্ছেন না তো যে হয়ত ড্যাশিং সুন্দরী নন, অনেক বড় ঘরের নন, কিন্তু তিনি আল্লাহকে ভয় করে নিজের চরিত্রকে সুরক্ষিত রাখেন, যিনি যেকোন মানুষের চেয়ে আল্লাহকে বেশি ভালোবাসেন ও ভয় করেন, হয়ত জান্নাতে তার আদিগন্ত বিস্তৃত রাজত্ব থাকবে। আপনি কি দ্বীনদারী ভুলে কি রূপকেই হিসেব করছেন? এই ভুল করে জীবনভর আফসোস করতে রাজি তো?
বোন, আপনি খুব আরাম-আয়েশে থাকার জন্য বেশ ভালো সম্পদওয়ালা ছেলে খুঁজছেন? অনেক ঠকমকে-চকমকে প্রোফাইলের কাউকে খুঁজতে গিয়ে এমন কাউকে ঠেলে দিচ্ছেন না তো যে হয়ত সাধারণ একটা জীবনযাপন করছেন, কিন্তু তিনি চরিত্রবান, তিনি ব্যবহারে কোমল এবং ইসলামকে ভালোবাসেন ও সেই মোতাবেক জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ পরিচালিত করতে চান। আখিরাতে তিনি জান্নাতে আল্লাহর কাছে পুরষ্কৃত হবেন, জান্নাতে তার বিশাল রাজত্ব থাকবে, হয়ত দুনিয়াতে নয়। চরিত্র আর সততা ফেলে কি সম্পদকেই মূল্য দিচ্ছেন? এই ভুল করে জীবনভর আফসোস করতে রাজি তো? বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারীই হোক আমাদের মুসলিমদের অন্তরের গভীর থেকে চাওয়া। মুখের মিষ্টি কথা হিসেবে নয়, প্রকৃত আর্জি হোক এটাই। আল্লাহ উত্তম সঙ্গী মিলিয়ে দিবেন ইনশা আল্লাহ।
(তিন)
মনের মতন মানুষ খুঁজছেন বিয়ের জন্য?
আল্লাহ হয়ত আপনাকে এমন কাউকে দিবেন না যে নিপুণ, কেননা এমন মানুষ নেই পৃথিবীতে। আপনি যা চান, ঠিক তেমন মানুষ আপনি পাবেন এটাও অবাস্তব কেননা মানুষকে অর্ডার দিয়ে বানানো যায় না। কিন্তু আল্লাহর কাছে চাইতে থাকলে এবং আল্লাহ ও রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ অনুযায়ী একজন জীবনসঙ্গী খুঁজতে চেষ্টা করলে, হৃদয়টাকে আল্লাহর সাথে জুড়ে রাখলে তিনি আপনাকে এমন কাউকে এনে দিবেন যে আপনার জন্য সবচেয়ে অসাধারণ।
ভেবে দেখুন, আপনি নিজেই কি নিখুঁত? আপনার দোষগুলো ভেবে দেখেছেন? সেগুলো আপনার *সবদিক দিয়ে পছন্দ* হওয়া মানুষটি কি সহ্য করতে পারবে? বরং, যিনি আপনাকে মেনে নিয়ে এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর সময়টুকু আপনার সঙ্গী হয়ে আখিরাতের অনন্তকালে আপনার সঙ্গী রয়ে যেতে চান -- তাকেই সবচেয়ে সুন্দর, আকর্ষণীয়, মনের মতন মানুষ হিসেবে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করুন।
পৃথিবীতে জান্নাতের প্রয়োজনীয়তা দিয়ে ভরে ফেলবেন না। নিখুঁত, ঝামেলাহীন, যন্ত্রণাহীন, শান্তিই শান্তি -- এই বিষয়গুলো কেবল জান্নাতেই সম্ভব। বরং, আল্লাহকে ভালোবাসে, ইসলামকে জানা মাত্রই মানতে চায় এমন একজন জীবনসঙ্গী খুঁজে নিন এবং তার সাথে ক্ষণস্থায়ী এই অনিপুণতায় ভরপুর পৃথিবীর সময়টা কাটিয়ে নিপুণ জান্নাতে পা রাখতে চেষ্টা করুন।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত দোয়া শোনেন। আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে চাইতে থাকুন, তিনি আপনাকে আপনার জন্যও শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার দিবেন। আল্লাহ আমাদের ভাই ও বোনদের উত্তম ও পবিত্র জীবন দান করুন।
(চার)
চরিত্রবান নেককার স্ত্রী হলো আপনার জীবনের কল্যাণকর ও উত্তম সম্পদ
সম্পদ কি তা কি সবাই বুঝি? পুরুষেরা অনেক সময় সম্পদ অর্জনের জন্য এখানে-ওখানে খুঁজে অস্থির হয়ে যায়, নিজ ঘরের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ে। টাকা-কড়িই কি কেবল সম্পদ? সেই সাথে বাড়ি-ঘর আর জমি-জমা-গাড়ি? শুধু অর্থসম্পদ কি আপনাদের সন্তানদের সুসন্তান করে গড়ে তুলতে পারবে? সন্তানেরা কার তত্ত্বাবধানে আর যত্নে বড় হয়, তা ভেবেছেন? হে ভাই, জীবনসঙ্গিনীর ব্যাপারে ভেবে দেখেছেন? একটা পরিবারে একজন নারী হলেন সংসারের স্থপতি, তার হাতের নিবিড় পরিচর্যায় বড় হয় আপনাদের সন্তানেরা, যখন আপনি জীবিকার কাজে বাইরে ব্যস্ত থাকেন তিনি আগলে রাখেন সংসারটিকে। তিনি আপনার চিন্তাগুলোর প্রভাবক -- ভালো চিন্তা হোক, ভুল চিন্তা হোক, দুনিয়াবী চিন্তা হোক, আখিরাতের চিন্তা হোক।
অল্প সম্পদকেও অনেক বেশি সম্পদ মনে হতে পারে যখন একজন ভাইয়ের জীবনসঙ্গিনী তার যা আছে সেগুলোতেই সন্তুষ্ট থেকে তাকে আল্লাহর উপরে ভরসা করে অর্থ উপার্জনের জন্য সাধ্যমতন চেষ্টাটুকু করতে উৎসাহ দিবেন। তখনই আপনার সবকিছু সুন্দর হবে, ছোট্ট ঘরটিকেও বড় মনে হবে, কষ্টের জীবনটিকেও আল্লাহর দেয়া পরীক্ষা হিসেবে সহনীয় আর কল্যাণকর হিসেবে খুঁজে পাবেন যখন দ্বীনদার স্ত্রী আপনার সঙ্গী হবেন এবং আপনিও যখন দ্বীনদার স্বামী হিসেবে তার যোগ্য জীবনসঙ্গী হবেন। প্রকৃত সম্পদ কী তা বুঝে নিতে তাই ভুল করবেন না যেন কখনো!! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
♥"সমগ্র পৃথিবীটাই সম্পদে পরিপূর্ণ। এর মধ্যে কল্যাণকর ও উত্তম সম্পদ হল চরিত্রবান নেককার স্ত্রী।"♥
[মুসলিম]
“ভাই, আমার শালার জন্য একটা পাত্রী দরকার , আপনার জানা শোনা কেউ থাকলে বলবেন।” ।
“খালাম্মা , আপনার জানা শোনা কোন পাত্রী আছে, বিয়ে শাদী করবো ” কোন বিবাহ করতে ইচ্ছুক যুবক বা বিবাহ দিতে ইচ্ছুক যুবক বা যুবতীর অভিভাভবকের কাছ এই টাইপের কথার সম্মুখীন মোটামুটি তরুণ থেকে শুরু করে মুরুব্বি আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব সবাই হয়।
বিয়ে এবং বিয়ের ক্ষেত্র তৈরি সমাজ জীবনের একটা অপরিহার্য অংশ।
আর উভয় পক্ষের আশা ভরসার প্রতীক ঘটক কিংবা মুখরা প্রাণচঞ্চল কোন আত্মীয়।
আবার কেউ কেউ একটু আগ বাড়িয়ে মিডিয়া বা দৈনিক পত্রিকার শরণাপন্ন হন।
একজন বিবাহযোগ্য পাত্রীর মধ্যে কি কি গুন তার ভালো পাত্রী হওয়ার মাপকাঠি?
এই একটি প্রশ্নের উত্তর বের করতে পারলেই বের হয়ে যায় সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির আসল স্বরূপ।
যেহেতু আমাদের সমাজে একটি মেয়ে জন্মের পর থেকেই তাকে পাত্রস্থ করার জন্য তৈরি করা হয় সুতরাং সমাজের কাছে উপযুক্ত বিয়ের পাত্রীর আদর্শ মাপকাঠি দিয়ে মাপা যায় সমাজে নারীর অবস্থান , এই নারী স্বাধীনতার যুগে কোন পর্যায়ে আছে! দৈনিক পত্রিকা সমূহে বিবাহ বিজ্ঞাপন পাত্র/ পাত্রী চাই এর উপর গবেষণা করেছেন ডক্টর কাবেরি গায়েন।
১৯৯৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত ৪৪৬ টি বিবাহ বিজ্ঞাপনের উপর এই গবেষণা করেন তিনি। তার এই অসাধারণ গবেষণায় উঠে এসেছে সমাজে নারীর মূল্যায়নের এক বাস্তবিক উপাখ্যান।
গবেষণায় দেখা গেছে- সবচেয়ে কাঙ্খিত পাত্রী সে যার গায়ের রং ফর্সা। ৪৪৬ টি বিজ্ঞাপনের মধ্যে ২২০ টি বিজ্ঞাপনে অর্থাৎ ৪৯.৩২ ভাগ বিজ্ঞাপনে সরাসরি ত্বকের রং ফর্সা উল্লেখ করা হয়েছে। মাত্র ১৩ টি বিজ্ঞাপনে পাত্রী পক্ষ পাত্রীর শ্যামলা রঙ্গের কথা উল্লেখ করেছে।
সুন্দরী , প্রকৃত সুন্দরী, অসামান্য রূপসী, রূপসী, অপূর্ব সুন্দরী এইধরনের বিশেষণ ব্যবহার করে সৌন্দর্যকে বিজ্ঞাপিত করা হয়েছে ২২২ টি বিজ্ঞাপন, অর্থাৎ ফর্সার চেয়েও বেশী, ৪৯.৭৬% ভাগ বিজ্ঞাপনে।
অপরদিকে পাত্রী পক্ষ একটি মাত্র বিজ্ঞাপনে সুদর্শন পাত্র চেয়েছেন।
অর্থাৎ- পাত্রী এবং পাত্র পক্ষ নির্বিশেষে সকলেই মনে করে বিয়ের পাত্রীকে অবশ্যই সুন্দরী হতেই হবে, কিন্তু পুরুষের সৌন্দর্য নিয়ে অন্তত পাত্রী পক্ষের মাথা ব্যাথা নেই। মোট ৮৬ টি বিজ্ঞাপনে সরাসরি লম্বা স্লিম বিশিষ্টক ব্যবহার করা হয়েছে। যা দৈহিক সৌন্দর্যের একটি সূচক। শুধু তাই নয়, পাত্রীর কাঙ্খিত উচ্চতা ও বলে দেওয়া হয় ইঞ্চি ফুট সমেত।
আরেকটি সূচক স্বাস্থ্যবতী। অর্থাৎ কোনভাবেই মেয়েটির দৈহিক সৌন্দর্যের কোন দিকই যেন ভুলক্রমে বাদ না পড়ে তাই ৪৯.৭৬% বিজ্ঞাপনে স্বাস্থ্যবতী মেয়ে চাওয়া হয়েছে।
৪৪৬ টি বিজ্ঞাপনের মাত্র ৪৪ টিতে ভদ্র নম্র মার্জিত পাত্রী চাওয়া হয়েছে, অবশ্যই সুন্দরীও হতে হবে সেই পাত্রীকে। মোট ৪৮ টি বিজ্ঞাপনে ধার্মিক মেয়ে চাওয়া হয়েছে, যা শতকরার হিসেবে মাত্র ১০% !
১০০ বছর আগে এমা গোল্ডম্যানের একটি বিখ্যাত উক্তির কথা মনে পড়ে-
পুরুষের আয় আর নারী সম্পর্কে সে দেখতে সুন্দর কিনা এর চেয়ে বেশী কি জানবার আছে?
গবেষণার সুবিধার জন্য যদিও সুন্দরী, ফর্সা, লম্বা, স্বাস্থ্যবতী এসব ভাগে ভাগ করা হয়, কিন্তু মূলকথা একটাই দাড়ায়- সেটা হোল দৈহিক সৌন্দর্য এগুলো ভাষার অলংকার, এই অলংকারকে তুলে নিলে যা থাকে তা হোল নারীর দেহ।
বিয়ের বাজারে নারী একধরণের পণ্য। এই পণ্যের দাম নির্ভর করে অন্য পণ্যের সাথে তুলনায় কতো সুন্দর সেই হিসেবে। আর যে ছেলের পকেট যতো ভারি, সে বাজার থেকে ততো বেশী টান দিতে পারবে সুন্দর পণ্যটি তুলে নিতে।
সবাই ফর্সা মেয়ে চায় কারন সাম্রাজ্যবাদীদের প্রকোপে ফর্সা মানেই সুন্দর এই ধারনা দেশে দেশে গেঁড়ে বসেছে।
সব সমাজেই দেখা যায় কালো মেয়েরা সামাজিক, পারিবারিক , রাজনৈতিক দিক থেকে অদৃশ্য, অথচ নির্যাতনের একদম কেন্দ্র বিন্দু। কাবেরি গায়েনের মতে- তারা সমাজের তলানি।
মলয় রায় চৌধুরীর মতে-" একটি পরিবার যতো ধনী হতে থাকে, তেমন তেমন ফর্সা নারীর সংখ্যা ও বাড়তে থাকে। কালো মেয়ের সংখ্যাধিক্য হয় দরিদ্র পরিবারে। ফর্সা মানে অভিজাত, কালো মানে অনভিজাত। ফর্সা মানে দেবী, আর কালো মানে অসুরকন্যা। সিনেমা থিয়েটারে কেনই বা কালো নায়িকা দরকার হলে ফর্সা সুন্দরী নায়িকাকে কালো রং মাখিয়ে নামানো হয়! কালোর কাছে ফর্সা হোল পিতৃতান্ত্রিক।"
(দুই )
এমন কাউকে ঠেলে দিচ্ছেন না তো যে হয়ত ড্যাশিং সুন্দরী নন !
ভাই, আপনি মনজুড়ানো সুন্দরী বউ খুঁজছেন? এমন কাউকে ঠেলে দিচ্ছেন না তো যে হয়ত ড্যাশিং সুন্দরী নন, অনেক বড় ঘরের নন, কিন্তু তিনি আল্লাহকে ভয় করে নিজের চরিত্রকে সুরক্ষিত রাখেন, যিনি যেকোন মানুষের চেয়ে আল্লাহকে বেশি ভালোবাসেন ও ভয় করেন, হয়ত জান্নাতে তার আদিগন্ত বিস্তৃত রাজত্ব থাকবে। আপনি কি দ্বীনদারী ভুলে কি রূপকেই হিসেব করছেন? এই ভুল করে জীবনভর আফসোস করতে রাজি তো?
বোন, আপনি খুব আরাম-আয়েশে থাকার জন্য বেশ ভালো সম্পদওয়ালা ছেলে খুঁজছেন? অনেক ঠকমকে-চকমকে প্রোফাইলের কাউকে খুঁজতে গিয়ে এমন কাউকে ঠেলে দিচ্ছেন না তো যে হয়ত সাধারণ একটা জীবনযাপন করছেন, কিন্তু তিনি চরিত্রবান, তিনি ব্যবহারে কোমল এবং ইসলামকে ভালোবাসেন ও সেই মোতাবেক জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ পরিচালিত করতে চান। আখিরাতে তিনি জান্নাতে আল্লাহর কাছে পুরষ্কৃত হবেন, জান্নাতে তার বিশাল রাজত্ব থাকবে, হয়ত দুনিয়াতে নয়। চরিত্র আর সততা ফেলে কি সম্পদকেই মূল্য দিচ্ছেন? এই ভুল করে জীবনভর আফসোস করতে রাজি তো? বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারীই হোক আমাদের মুসলিমদের অন্তরের গভীর থেকে চাওয়া। মুখের মিষ্টি কথা হিসেবে নয়, প্রকৃত আর্জি হোক এটাই। আল্লাহ উত্তম সঙ্গী মিলিয়ে দিবেন ইনশা আল্লাহ।
(তিন)
মনের মতন মানুষ খুঁজছেন বিয়ের জন্য?
আল্লাহ হয়ত আপনাকে এমন কাউকে দিবেন না যে নিপুণ, কেননা এমন মানুষ নেই পৃথিবীতে। আপনি যা চান, ঠিক তেমন মানুষ আপনি পাবেন এটাও অবাস্তব কেননা মানুষকে অর্ডার দিয়ে বানানো যায় না। কিন্তু আল্লাহর কাছে চাইতে থাকলে এবং আল্লাহ ও রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ অনুযায়ী একজন জীবনসঙ্গী খুঁজতে চেষ্টা করলে, হৃদয়টাকে আল্লাহর সাথে জুড়ে রাখলে তিনি আপনাকে এমন কাউকে এনে দিবেন যে আপনার জন্য সবচেয়ে অসাধারণ।
ভেবে দেখুন, আপনি নিজেই কি নিখুঁত? আপনার দোষগুলো ভেবে দেখেছেন? সেগুলো আপনার *সবদিক দিয়ে পছন্দ* হওয়া মানুষটি কি সহ্য করতে পারবে? বরং, যিনি আপনাকে মেনে নিয়ে এই ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর সময়টুকু আপনার সঙ্গী হয়ে আখিরাতের অনন্তকালে আপনার সঙ্গী রয়ে যেতে চান -- তাকেই সবচেয়ে সুন্দর, আকর্ষণীয়, মনের মতন মানুষ হিসেবে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করুন।
পৃথিবীতে জান্নাতের প্রয়োজনীয়তা দিয়ে ভরে ফেলবেন না। নিখুঁত, ঝামেলাহীন, যন্ত্রণাহীন, শান্তিই শান্তি -- এই বিষয়গুলো কেবল জান্নাতেই সম্ভব। বরং, আল্লাহকে ভালোবাসে, ইসলামকে জানা মাত্রই মানতে চায় এমন একজন জীবনসঙ্গী খুঁজে নিন এবং তার সাথে ক্ষণস্থায়ী এই অনিপুণতায় ভরপুর পৃথিবীর সময়টা কাটিয়ে নিপুণ জান্নাতে পা রাখতে চেষ্টা করুন।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত দোয়া শোনেন। আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে চাইতে থাকুন, তিনি আপনাকে আপনার জন্যও শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার দিবেন। আল্লাহ আমাদের ভাই ও বোনদের উত্তম ও পবিত্র জীবন দান করুন।
(চার)
চরিত্রবান নেককার স্ত্রী হলো আপনার জীবনের কল্যাণকর ও উত্তম সম্পদ
সম্পদ কি তা কি সবাই বুঝি? পুরুষেরা অনেক সময় সম্পদ অর্জনের জন্য এখানে-ওখানে খুঁজে অস্থির হয়ে যায়, নিজ ঘরের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ে। টাকা-কড়িই কি কেবল সম্পদ? সেই সাথে বাড়ি-ঘর আর জমি-জমা-গাড়ি? শুধু অর্থসম্পদ কি আপনাদের সন্তানদের সুসন্তান করে গড়ে তুলতে পারবে? সন্তানেরা কার তত্ত্বাবধানে আর যত্নে বড় হয়, তা ভেবেছেন? হে ভাই, জীবনসঙ্গিনীর ব্যাপারে ভেবে দেখেছেন? একটা পরিবারে একজন নারী হলেন সংসারের স্থপতি, তার হাতের নিবিড় পরিচর্যায় বড় হয় আপনাদের সন্তানেরা, যখন আপনি জীবিকার কাজে বাইরে ব্যস্ত থাকেন তিনি আগলে রাখেন সংসারটিকে। তিনি আপনার চিন্তাগুলোর প্রভাবক -- ভালো চিন্তা হোক, ভুল চিন্তা হোক, দুনিয়াবী চিন্তা হোক, আখিরাতের চিন্তা হোক।
অল্প সম্পদকেও অনেক বেশি সম্পদ মনে হতে পারে যখন একজন ভাইয়ের জীবনসঙ্গিনী তার যা আছে সেগুলোতেই সন্তুষ্ট থেকে তাকে আল্লাহর উপরে ভরসা করে অর্থ উপার্জনের জন্য সাধ্যমতন চেষ্টাটুকু করতে উৎসাহ দিবেন। তখনই আপনার সবকিছু সুন্দর হবে, ছোট্ট ঘরটিকেও বড় মনে হবে, কষ্টের জীবনটিকেও আল্লাহর দেয়া পরীক্ষা হিসেবে সহনীয় আর কল্যাণকর হিসেবে খুঁজে পাবেন যখন দ্বীনদার স্ত্রী আপনার সঙ্গী হবেন এবং আপনিও যখন দ্বীনদার স্বামী হিসেবে তার যোগ্য জীবনসঙ্গী হবেন। প্রকৃত সম্পদ কী তা বুঝে নিতে তাই ভুল করবেন না যেন কখনো!! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
♥"সমগ্র পৃথিবীটাই সম্পদে পরিপূর্ণ। এর মধ্যে কল্যাণকর ও উত্তম সম্পদ হল চরিত্রবান নেককার স্ত্রী।"♥
[মুসলিম]
0 comments:
Post a Comment