মেয়েটি ছিল উনিশ বছরের।কিন্তু এই বয়সের অন্যসব মেয়েদের তুলনায় একটু আলাদা।এই বয়সে সব মেয়েরাই যেমন বিশেষ কাউকে পাশে চায়,তার হাত ধরে হাঁটার স্বপ্ন দেখে,কল্পনায় থাকে ছোট্ট একটা সংসার,সুখী-সুন্দর একটা পরিবার,এই মেয়েটি তেমন না।মেয়েটিও ভাবে।তবে ওর ভাবনায় থাকে গল্পের বইয়ের জগত আর তার বিভিন্ন দুধর্ষ চরিত্র হয়ে উঠার চেষ্টা,কিভাবে হঠাৎ করেই কাউকে না জানিয়ে দুঃসাহসিক অভিযানে বেড়িয়ে পড়া যায়,কিভাবে মায়ের আচারের বয়াম মাকে লুকিয়ে খালি করা যায়,ভাইয়াকে কিসের ভয় দেখালে আইসক্রিম খাওয়ার সুযোগ পাওয়া যেতে পারে,ক্লাশের কোন মেয়েকে কিভাবে জ্বালাতন করা যায়,ফেসবুকে কিভাবে কাকে পচানো যায়।পোশাকে উনিশ বছেরর তরুণী হলেও চলাফেরার ছিল পাড়ার ছেলেদের যেকোনো মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ করতে প্রস্তুত সেই ডানপিটে,বেপরোয়াদশ বছরের বাচ্চা মেয়েটি।
সব ভালই চলছিল।যতদিন না...
ছেলেটি একজন শিক্ষক।জয়েন করার পর প্রায় এক বছর হল।সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্লাশের বহু মেয়ে তার উপর ক্রাশ খেয়েছে,লাভ হয়নি।কেউ বেশিদুর এগোতে পারেনি।স্যার হিসেবে অল্পবয়সী এই ছেলেটির প্রচন্ড ব্যক্তিত্ব সবার পথে বাধা।ব্যাপারটা অনেকটা জালে আটকা পড়ার মতো।যে জালে আটকা পড়েছে অনেকে,কিন্তু জালের কেন্দ্রে কেউ পৌঁছাতে পারছেনা।যেন কাজী আনোয়ার হোসেনের সেই বিখ্যাত লাইন,“টানে সবাইকে,কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না”।ছেলেটি বুঝতে পারে সবই,কিন্তু এসবে ও আগ্রহী নয়,কারও প্রতিই নয়।তবে... একজন আছে... সবার চেয়ে আলাদা।ক্লাশে বসেও সবাইকে জ্বালাতন করছে মেয়েটি,স্যার-ম্যাডামরাও রেহাই পাননা।ক্লাশের সবচেয়ে ভাল ছাত্রী টিচারদের বকুনি থেকে রক্ষা পায়না মেয়েটি।কিন্তু তবু ছেলেটি মেয়েটির উপর রাগ করতে পারেনা।কি যেন একটা আছে মেয়েটার মাঝে।
ক্লাশে একদিন হঠাৎ জিজ্ঞেস করল ছেলেটি,“আপনারা ঘুম থেকে উঠেন কয়টায়?আমাকে এটা বলবেন না যে সবাই খুব ভোরে উঠেন।কারন সারারাত ফেসবুকে,মোবাইলেআড্ডা দেয়ার পর সবাই যে সকালে উঠতে পারেননা এটা জানি।ব্যতিক্রমওনিশ্চয়ই আছে।কিন্তু আমি তাদের দলে না। আমি ফেসবুক বা মোবাইলের কারনে না,রাত জেগে বই পড়ি,তাই সকালে উঠতে পারিনা।আমার সব পড়াশোনাও করেছি রাতে।যেহেতু আমি ভোরে উঠে পড়তে পারিনা,কাজেই রাত জেগেই আমি আমার পড়াশোনা করেছি,সবসময়,এখনও তাই।আর এজন্য সকালে কখনও বাসার সবার সাথে আমার নাশতা খাওয়া হয়না।একা বসে নাশতা খাই।এমনকি সকালের চা-টাও আমাকে নিজে বানিয়ে খেতে হয়।তোমাদের এমন হয়?”... গল্পে গল্পে সেদিনের ক্লাশ শেষ হল। কিছুদিন পর সেমিস্টার ফাইনাল,ক্লাশ সাসপেন্ড হয়ে যাচ্ছে আজই।মেয়েটি পড়া বুঝতে স্যারের রুমে গেল।সবসময়ের মতো অস্থির আচরন,দুষ্টুমিমাখা কথা।স্যারও হাসিমুখে সব পড়া বুঝিয়ে দিলেন।বুঝানো শেষ,মেয়েটি বলল,“স্যার,এই সেমিস্টারে আমার রেজাল্ট ভাল হবেনা।দুটো চ্যাপ্টার ঠিকভাবে পারিনা,আসলে ওই দুটো চ্যাপ্টারের কিছুই পারিনা”।
স্যারের হাত থেকে ওর বইটা ফেরত নিতে হাত বাড়াল।স্যারও হাত বাড়ালেন বই হাতে।কিন্তু ও বইটা ধরার পরও ছেড়ে দিলেন না।সামান্য ঝুঁকে খুব ধীরে ধীরে বললেন,“চা বানাতে পারো তো? তাহলেই হবে।আমার কিন্তু প্রতিদিন নিজে নিজে চা করতে ভাল লাগেনা।” কিছুক্ষন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে ছিল তখন ও স্যারের হাসিমুখের সামনে।এই হঠাৎ থমকে যাওয়া কি সম্বোধনের জন্যে যে স্যার সবসময় ছাত্রীদের ‘আপনি’ করে বলেন,আজ হঠাৎ ওকে ‘তুমি’ বললেন, নাকি স্যারের উচ্চারিত কথাগুলোর জন্য? প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা না করেই হঠাৎ বের হয়ে এসেছিল,বই না নিয়েই।পরে স্যার অন্য একজনকে দিয়ে বই ফেরত পাঁঠায়।
সেদিন সন্ধ্যা...
মা রান্নাঘরে।কাজ করতে করতে মনে হল কেউ পিছনে দাঁড়ানো।তাকিয়ে দেখলেন মেয়েটি দাঁড়ানো মাথা নিচু করে।বললেন,“কিরে,নতুন কোন দুষ্টুমি মাথায় এসেছে?”
“না মা।কোন দুষ্টুমি না।মা,... তুমি আমাকে চা বানানো শিখাবে?” এক মাস পর...
পরীক্ষা আর এরপরের গ্রীষ্মের ছুটির পর আজ প্রথম ক্লাস।ডিপার্টমেন্টে নিজের রুমে চিন্তামগ্ন ছেলেটি।কারন মেয়েটি বদলে গিয়েছে।আগের সেই চঞ্চলতা নেই।কেমন যেন লাজুক চাহনি,আড়ষ্ট চলাফেরা।সবকিছুরপরও সেই স্নিগ্ধ মেয়েটি অপূর্ব সুন্দর আজও।কিন্তু ভয় হচ্ছে-মেয়েটির এই বাহ্যিক পরিবর্তন মানসিক দিক দিয়ে খারাপ কোন দিকে মোড় নেবে না তো।হঠাৎ খেয়াল করল টেবিলে একটা ভাঁজ করা কাগজ রাখা গ্লাসের নিচে।
কাগজটা খুলে পড়ল ছেলেটি, পকেটে রেখে দিল,ঠোঁটের কোনে ছোট্ট হাসি... কাগজটায় লেখা ছিল,“আমি চা বানাতে শিখেছি”।
সব ভালই চলছিল।যতদিন না...
ছেলেটি একজন শিক্ষক।জয়েন করার পর প্রায় এক বছর হল।সেই শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্লাশের বহু মেয়ে তার উপর ক্রাশ খেয়েছে,লাভ হয়নি।কেউ বেশিদুর এগোতে পারেনি।স্যার হিসেবে অল্পবয়সী এই ছেলেটির প্রচন্ড ব্যক্তিত্ব সবার পথে বাধা।ব্যাপারটা অনেকটা জালে আটকা পড়ার মতো।যে জালে আটকা পড়েছে অনেকে,কিন্তু জালের কেন্দ্রে কেউ পৌঁছাতে পারছেনা।যেন কাজী আনোয়ার হোসেনের সেই বিখ্যাত লাইন,“টানে সবাইকে,কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না”।ছেলেটি বুঝতে পারে সবই,কিন্তু এসবে ও আগ্রহী নয়,কারও প্রতিই নয়।তবে... একজন আছে... সবার চেয়ে আলাদা।ক্লাশে বসেও সবাইকে জ্বালাতন করছে মেয়েটি,স্যার-ম্যাডামরাও রেহাই পাননা।ক্লাশের সবচেয়ে ভাল ছাত্রী টিচারদের বকুনি থেকে রক্ষা পায়না মেয়েটি।কিন্তু তবু ছেলেটি মেয়েটির উপর রাগ করতে পারেনা।কি যেন একটা আছে মেয়েটার মাঝে।
ক্লাশে একদিন হঠাৎ জিজ্ঞেস করল ছেলেটি,“আপনারা ঘুম থেকে উঠেন কয়টায়?আমাকে এটা বলবেন না যে সবাই খুব ভোরে উঠেন।কারন সারারাত ফেসবুকে,মোবাইলেআড্ডা দেয়ার পর সবাই যে সকালে উঠতে পারেননা এটা জানি।ব্যতিক্রমওনিশ্চয়ই আছে।কিন্তু আমি তাদের দলে না। আমি ফেসবুক বা মোবাইলের কারনে না,রাত জেগে বই পড়ি,তাই সকালে উঠতে পারিনা।আমার সব পড়াশোনাও করেছি রাতে।যেহেতু আমি ভোরে উঠে পড়তে পারিনা,কাজেই রাত জেগেই আমি আমার পড়াশোনা করেছি,সবসময়,এখনও তাই।আর এজন্য সকালে কখনও বাসার সবার সাথে আমার নাশতা খাওয়া হয়না।একা বসে নাশতা খাই।এমনকি সকালের চা-টাও আমাকে নিজে বানিয়ে খেতে হয়।তোমাদের এমন হয়?”... গল্পে গল্পে সেদিনের ক্লাশ শেষ হল। কিছুদিন পর সেমিস্টার ফাইনাল,ক্লাশ সাসপেন্ড হয়ে যাচ্ছে আজই।মেয়েটি পড়া বুঝতে স্যারের রুমে গেল।সবসময়ের মতো অস্থির আচরন,দুষ্টুমিমাখা কথা।স্যারও হাসিমুখে সব পড়া বুঝিয়ে দিলেন।বুঝানো শেষ,মেয়েটি বলল,“স্যার,এই সেমিস্টারে আমার রেজাল্ট ভাল হবেনা।দুটো চ্যাপ্টার ঠিকভাবে পারিনা,আসলে ওই দুটো চ্যাপ্টারের কিছুই পারিনা”।
স্যারের হাত থেকে ওর বইটা ফেরত নিতে হাত বাড়াল।স্যারও হাত বাড়ালেন বই হাতে।কিন্তু ও বইটা ধরার পরও ছেড়ে দিলেন না।সামান্য ঝুঁকে খুব ধীরে ধীরে বললেন,“চা বানাতে পারো তো? তাহলেই হবে।আমার কিন্তু প্রতিদিন নিজে নিজে চা করতে ভাল লাগেনা।” কিছুক্ষন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে ছিল তখন ও স্যারের হাসিমুখের সামনে।এই হঠাৎ থমকে যাওয়া কি সম্বোধনের জন্যে যে স্যার সবসময় ছাত্রীদের ‘আপনি’ করে বলেন,আজ হঠাৎ ওকে ‘তুমি’ বললেন, নাকি স্যারের উচ্চারিত কথাগুলোর জন্য? প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা না করেই হঠাৎ বের হয়ে এসেছিল,বই না নিয়েই।পরে স্যার অন্য একজনকে দিয়ে বই ফেরত পাঁঠায়।
সেদিন সন্ধ্যা...
মা রান্নাঘরে।কাজ করতে করতে মনে হল কেউ পিছনে দাঁড়ানো।তাকিয়ে দেখলেন মেয়েটি দাঁড়ানো মাথা নিচু করে।বললেন,“কিরে,নতুন কোন দুষ্টুমি মাথায় এসেছে?”
“না মা।কোন দুষ্টুমি না।মা,... তুমি আমাকে চা বানানো শিখাবে?” এক মাস পর...
পরীক্ষা আর এরপরের গ্রীষ্মের ছুটির পর আজ প্রথম ক্লাস।ডিপার্টমেন্টে নিজের রুমে চিন্তামগ্ন ছেলেটি।কারন মেয়েটি বদলে গিয়েছে।আগের সেই চঞ্চলতা নেই।কেমন যেন লাজুক চাহনি,আড়ষ্ট চলাফেরা।সবকিছুরপরও সেই স্নিগ্ধ মেয়েটি অপূর্ব সুন্দর আজও।কিন্তু ভয় হচ্ছে-মেয়েটির এই বাহ্যিক পরিবর্তন মানসিক দিক দিয়ে খারাপ কোন দিকে মোড় নেবে না তো।হঠাৎ খেয়াল করল টেবিলে একটা ভাঁজ করা কাগজ রাখা গ্লাসের নিচে।
কাগজটা খুলে পড়ল ছেলেটি, পকেটে রেখে দিল,ঠোঁটের কোনে ছোট্ট হাসি... কাগজটায় লেখা ছিল,“আমি চা বানাতে শিখেছি”।
0 comments:
Post a Comment