মাল্টিমিডিয়া কি প্রশ্ন করলে সম্ভবত দুধরনের উত্তর পাওয়া যাবে। একপক্ষ বলবেন, যেখানে লেখা, ছবি, ভিডিও, শব্দ ইত্যাদি দিয়ে কিছু প্রকাশ করা হয়।
আরেক পক্ষের উত্তর দেয়ার আগে ১৩ বছর আগের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করা যেতে পারে। এক ব্যক্তি মাল্টিমিডিয়া সিডি কিনেছেন। ফেরত এসে বললেন, কি মাল্টিমিডিয়া দিলেন উইনএম্প দিয়ে চলে না জেটঅডিও দিয়েও চলে না। দ্বিতীয় পক্ষের কাছে এখনও মাল্টিমিডিয়া অর্থ গান শোনা বা ভিডিও দেখার ব্যবস্থা। মাল্টিমিডিয়া সফটঅয়্যার বলতে তারা মিডিয়া প্লেয়ার বোঝেন।
অথচ বিষয়টি এমন হওয়ার কথা ছিল না। অন্তত ১৫ বছর আগে বাংলায় সিডিভিত্তিক মাল্টিমিডিয়া তৈরী করা হয়েছে। এতদিনে সেটা নিজস্ব ক্ষেত্র তৈরী করে নিতে পারত। কেন হয়নি সেটা ভিন্ন প্রসংগ। বরং এখনও কি হতে পারে, এরফলে ব্যবহারকারীরা কিভাবে উপকৃত হতে পারেন এবং এরসাথে সম্পৃক্ত হয়ে বহু মানুষ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন এই বিষয়গুলি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি লেখা দেয়ার উদ্দ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রথম পর্বে একে পেশা হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ কতটা সেটাই তুলে ধরা হচ্ছে।
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা নামের বিশ্বকোষের পরিচিতি বর্ননা করা প্রয়োজন হয় না। এর মুদ্রন বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে পাওয়া যায় ডিভিডিতে এবং ইন্টারনেটে। ছাপা বইয়ের তুলনায় এতে অতিরিক্ত সুবিধে হিসেবে রয়েছে সার্চ করার ব্যবস্থা, এনিমেশন, ভিডিও এবং শব্দের ব্যবহার। পুরোটাই রয়েছে একটিমাত্র ডিভিডিতে। ফলে প্রতিযোগিতায় ছাপানো সংস্করন টিকে থাকতে পারেনি। এই উদাহরন বলে দিতে পারে মাল্টিমিডিয়ার সম্ভাবনা কতটুকু।
মাল্টিমিডিয়ার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলি একবার দেখে নেয়া যাক।
.শিক্ষামুলক মাল্টিমিডিয়া
অ-তে অজগর, আ-তে আম শিশুদের জন্য এই শিক্ষা পদ্ধতি প্রচলিত বহু যুগ ধরে। কারন একটাই, এভাবে সহজে শেখা যায়। শিশু আ অক্ষরের চেয়ে আম ভালভাবে মনে রাখতে পারে। তারসাথে যুক্ত করে অক্ষর মনে রাখে। অন্যান্য শিক্ষার ক্ষেত্রেও মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতির ব্যবহার রয়েছে। শিশুদের হাতে ছবির ছক মেলানো, ছোট ছোট অংশ জোড়া দিয়ে কিছু তৈরীর খেলনা ইত্যাদি শিশুকে বুদ্ধিদিপ্ত করে। এই কাজগুলি মাল্টিমিডিয়ায় তৈরী করা সহজ। ছবি, এনিমেশন, ভিডিও, শব্দ ইত্যাদি দিয়ে ছক মেলানো বা অন্যান্য শিক্ষামুলক খেলার মাধ্যমে ভাষা, অংক, প্রকৃতি সবকিছু শেখানো যায়। সারা বিশ্বেই মাল্টিমিডিয়ার ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য শিক্ষা একটি প্রধান বিষয়।
আর বড়দের ক্ষেত্রে বইয়ের বিকল্প ভুমিকা রাখতে পারে মাল্টিমিডিয়া। পদার্থবিদ্যায় লিখে বর্ননার সময় যা দেখানো সম্ভব না মাল্টিমিডিয়ায় এনিমেশনের সাহায্যে দেখানো সম্ভব। এভাবে যে কোন বিষয় নিয়েই মাল্টিমিডিয়া তৈরী হতে পারে।
.মাল্টিমিডিয়া টিউটোরিয়াল
যারা কম্পিউটারে কাজ করেন তারা ভিডিও টিউটোরিয়ালের সাথে পরিচিত। ভিডিও টিউটোরিয়ালের প্রচলন ভিসিআর যুগ থেকে। মাল্টিমিডিয়া টিউটোরিয়াল ভিডিও টিউটোরিয়াল থেকে কিছুটা আলাদা। ভিডিওতে সাধারনভাবে লিখে বর্ননা করার সুযোগ থাকে না। অথচ অনেক বিষয়ই প্রকাশ করার জন্য লিখিত বর্ননা জরুরী। মাল্টিমিডিয়া সেই সুযোগ দেয়। যেখানে লেখা প্রয়োজন সেখানে লেখা, যেখানে ভিডিও প্রয়োজন সেখানে ভিডিও এভাবে মাল্টিমিডিয়া তৈরী করা যায়। পদার্থবিদ্যা, চিকিতসাবিদ্যা থেকে শুরু করে সমস্ত বিষয়েই মাল্টিমিডিয়া রয়েছে। একে ডিজিটাল বই বলতে পারেন। সাথে সুবিধে হচ্ছে বইয়ের তুলনায় মাল্টিমিডিয়ার খরচ কম, ফলে দাম কম।
বর্তমানে বাংলায় ভিডিও টিউটোরিয়ালের সংখ্যা অনেক। ফটোশপ শেখা থেকে শুরু করে শেয়ার বাজার কিংবা হস্তরেখা সব বিষয়েই টিউটোরিয়াল পওয়া যায়। শুরুতে (২০০০ সালের দিকে) মাল্টিমিডিয়া টিউটোরিয়ালের জনপ্রিয়তা থাকলেও বর্তমানে এগুলি ভিডিও টিউটোরিয়ালে পরিনত হয়েছে (কেন হয়েছে সে প্রসংগে পরের দিকে লেখা হবে)। অনেকেই এতে সন্তুষ্ট নন। নতুনভাবে মাল্টিমিডিয়াভিত্তিক টিউটোরিয়াল একই সাথে বই, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং প্রশিক্ষকের অভাব পুরন করতে পারে।
.তথ্য বিষয়ক মাল্টিমিডিয়া
ব্রিটানিকা কিংবা এনকার্টা যেমন বিশ্বকোষ হিসেবে বিশ্বখ্যাত তেমনি স্থানীয়ভাবে বাংলায় এধরনের তথ্য বিষয়ক মাল্টিমিডিয়া তৈরী হতে পারে। অতীতে এধরনের কাজ হয়েছেও। সেগুলি ক্রমাগত উন্নতির দিকে যাওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। শুনে অবাক হতে পারেন আমি জাপানী ভাষায় বাংলাদেশের ফুল-ফল বিষয়ক বই পেয়েছি, বাংলা ভাষায় পাইনি। আবারও একই কথা বলতে হচ্ছে, একজন ব্যক্তি উদ্দ্যোগ নিয়ে কম খরচে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে একাজ করতে পারেন।
.বিনোদন মুলক মাল্টিমিডিয়া
সাহিত্য, সংগিত, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা এদের সবগুলিই জনপ্রিয় বিষয়। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে এগুলি যত ভালভাবে উপস্থাপন করা যায় সেটা অন্যভাবে যায় না। এমনকি ইন্টারনেটে প্রকাশ করার সময়ই কিছূ সীমাবদ্ধতার বিষয় থাকে যা মাল্টিমিডিয়ায় নেই। এই বিষয়গুলি নিয়ে মাল্টিমিডিয়া তৈরী করা যেতে পারে।
মাল্টিমিডিয়ার জন্য নির্দিস্ট বিষয় নেই। প্রতিটি সম্ভাব্য বিষয়ে ইংরেজি বা অন্য ভাষায় মাল্টিমিডিয়ার দেখা পাওয়া যাবে। বাংলায় সেটা সম্ভব।
মাল্টিমিডিয়া শব্দটির মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের কাজ। পরিকল্পনা, তথ্য সংগ্রহ , গবেষনা থেকে শুরু করে গ্রাফিক ডিজাইন, ছবি উঠানো, ভিডিও, এনিমেশন এবং প্রোগ্রামিং, এমনকি বাজারজাত করন, এদের সবগুলিই পেশা হিসেবে পরিচিত হতে পারে। কর্মসংস্থান হতে পারে বহু মানুষের। অন্যদিকে শিক্ষাকে হাতের নাগালে আনতে পারে মাল্টিমিডিয়া।
প্রশ্ন থাকতেই পারে এত সম্ভাবনার পরও বাস্তবে সেটা ঘটেনি কেন ? একযুগ আগে শুরু হয়েও এখনও বিস্তৃতিলাভ করেনি কেন ? এতদিন যখন হয়নি তখন নতুনভাবে হওয়ার আশা কতটা ?এই বিষয়গুলি তুলে ধরা হবে আগামী পোষ্টে।
Home
Posts in Bangla
মাল্টিমিডিয়া ও প্রেজেন্টেশন টিউটোরিয়াল
মাল্টিমিডিয়া ও প্রেজেন্টেশন টিউটোরিয়াল: মাল্টিমিডিয়া তৈরী হতে পারে আপনার পেশা
- Blogger Comment
- Facebook Comment
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
0 comments:
Post a Comment