কয়েক বছর আগে পিসিতে ভিডিও এডিটিং সফটঅয়্যারের ক্ষেত্রে প্রবল প্রতিদ্বন্দিতা ছিল এডবি প্রিমিয়ার এবং ইউলিড মিডিয়া ষ্টুডিও এই দুই সফটঅয়্যারের মধ্যে। সাধারন ব্যবহারকারীদের অনেকেই মনে করতেন প্রিমিয়ার থেকে ইউলিড এগিয়ে, কারন এতে রেন্ডার হয় খুব দ্রুত, ব্যবহার সহজ। এরপর অবশ্য দিন পাল্টেছে। প্রিমিয়ার যখন প্রো হয়েছে তখন এতে শুধুমাত্র সিংগেল লাইন এডিটিং রাখা হয়েছে, দুই ট্রাকের মাঝখানে ট্রানজিশন ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে ইউলিড মিডিয়া ষ্টুডিও তাদের নতুন ভার্শন ৮ বের করার সময়ও একাজ করেছে। সেটি মোটেও জনপ্রিয়তা পায়নি। ফল হচ্ছে, যারা অতিমাত্রায় ট্রানজিশন ব্যবহার করেন তারা সমস্যায় পড়েন। বিশেষ করে বিয়ের ভিডিও এডিট করার সময়, যেখানে গ্রাহক এগুলি চান।
অনেকের কাছেই এখনও সমাধান তাই ইউলিড মিডিয়া ষ্টুডিও-র সেই পুরনো ভার্শন, ৭ প্রো। হলিউড ইফেক্টস, ভিডিও ইফেক্টস, এক্সপ্লোড, এই প্লাগইনগুলি ইচ্ছেমত ব্যবহার করা যায়। মিডিয়া ষ্টুডিও বান্ডল এর সাথে অডিও এডিটিং, টাইটেল তৈরী, ভিডিও ক্যাপচার ইত্যাদির জন্য পৃথক সফটঅয়্যার রয়েছে।
এডিটিং এর সাধারন কাজগুলি কিভাবে করবেন জেনে নিন।
.মিডিয়া ষ্টুডিও ইনষ্টল করার পর ভিডিও ষ্টুডিও চালু করলে এধরনের একটি স্ক্রিন পাবেন।
Edit file formatঅংশে কোন ধরনের ভিডিও নিয়ে কাজ করবেন সেটা সিলেক্ট করে দিন। সাধারনত সিডি-ডিভিডি ইত্যাদির জন্যMPGএবং অন্যান্য কাজেAVIব্যবহার করবেন।
ডিভিডি/সিডি ভিডিও তৈরীর জন্য সিলেক্ট করার পর সিডি/ডিভিডির নির্দিষ্ট টেম্পলেট সিলেক্ট করুন।
টাইমলাইন
ভিডিও ষ্টুডিও সফটঅয়্যারের নিচের দিকে রয়েছে অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে টাইম লাইন। এডিটিং এর মুল কাজগুলি এখানে করবেন। টাইমলাইনের বিভিন্ন অংশগুলি সম্পর্কে জেনে নিন।
.মুল ভিডিওগুলি (অথবা ইমেজ) ব্যবহার করবেনVaএবংVbট্রাকে। এই দুইয়ের মধ্যে রয়েছে ট্রানজিশন(Fx)ট্রাক। সেখানে ট্রানজিশন ব্যবহার করবেন।
.ওভারলে ভিডিও, টাইটেল ইত্যাদির জন্যV1, V2ইত্যাদি ট্রাক ব্যবহার করবেন। ইচ্ছে করলে এই ট্রাকের সংখ্যা বাড়ানো যায়। ওভারলে ভিডিও হচ্ছে এক ভিডিওর ওপর আরেক ভিডিও (অথবা ইমেজ) এমনভাবে ব্যবহার করা যেখানে বিশেষ যায়গা দিয়ে নিচের ভিডিও দেখা যায়।
.ভিডিও-এ এবং ভিডিও-বি এর সাথে অডিও থাকলে তাকে পাওয়া যাবেAa, Abট্রাকে। কাজেই অতিরিক্ত অডিও যোগ করতে হলে তাকে রাখতে হবেA1, A2ট্রাকে। অডিও ট্রাক ইচ্ছেমত বাড়িয়ে নেয়া যায়।
.কোন ক্লিপ সিলেক্ট করার জন্যClip selectionটুল ব্যবহার করতে হবে। এই টুল ব্যবহার করে যে কোন ক্লিপের ওপর ক্লিক করে সিলেক্ট করার তাকে একই ট্রাকে এক যায়গা থেকে আরেক যায়গায়, কিংবা এক ট্রাক থেকে আরেক ট্রাকে সরানো যাবে, ডিলিট কি চেপে মুছে দেয়া যাবে।
.ভিডিও ক্লিপের নির্দিষ্ট যায়গায় কেটে পৃথক করার জন্যScissorsটুল ব্যবহার করতে হবে। এই টুল সিলেক্ট করে ক্লিপের যেখানে ক্লিক করবেন সেখানে ক্লিপটি বিভক্ত হবে।
অধিকাংশ কাজের সময় আপনাকে টুল ব্যবহার করতে হবে। বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখুন।
ভিডিও, ইমেজ, সাউন্ড ইমপোর্ট করা
.ভিডিও ইমপোর্ট করার জন্য টাইমলাইনের আইকনে টুলে (টাইমলাইনের একেবারে শুরুতে প্রথম বাটন) ক্লিক করুন।
.ভিডিও ফাইলটি কোথায় আছে সিলেক্ট করুন। ইচ্ছে করলে প্রিভিউ দেখে নিতে পারেন প্লে বাটনে ক্লিক করে।
.বাটনে ক্লিক করলে মাউস পয়েন্টারের সাথে ক্লিপটি দেখা যাবে। টাইমলাইনে যেখানে ক্লিপটি রাখতে চান সেখানে ক্লিক করুন।
.ফাইনাল ভিডিওতে ভিডিও ক্লিপগুলি যেভাবে পরপর পেতে চান সেভাবে পরপর এনে টাইম টাইমলাইনে সাজিয়ে নিন।
অন্যভাবে, যে ট্রাকে ভিডিও ইমপোর্ট করতে চান সেখানে রাইট-ক্লিক করেVideo Fileসিলেক্ট করতে পারেন। একইভাবে অডিও ট্রাকে অডিও ফাইল আনা যাবে কিংবাInsert Audio Fileটুল (Insert Video Fileএর পাশে) ব্যবহার করতে পারেন।
ভিডিও থেকে অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেয়া
ভিডিও এডিটিং এর একটি প্রধান কাজ হচ্ছে ক্লিপ থেকে অপ্রয়োজনীয় ভিডিও বাদ দেয়া। কাজটি যেভাবে করবেন।
.সিজর টুল সিলেক্ট করুন
.যেখান থেকে বাদ দেয়া শুরু সেখানে ক্লিপের ওপর ক্লিক করুন। ক্লিপটি বিভক্ত হবে।
.যে পর্যন্ত বাদ দেবেন সেখানে ক্লিক করু, সেখানেও বিভক্ত হবে।
.ক্লিপ সিলেকসন টুল দিয়ে এই অংশটুকু সিলেক্ট করুন।
.কিবোর্ডে ডিলিট চাপ দিন।
ইমেজ ফাইল ব্যবহার
.ভিডিওর মত একই পদ্ধতিতে ভিডিওর বদলে ইমেজ ফাইল ইমপোর্ট এবং ব্যবহার করতে পারেন।
.ইমেজ ফাইলের দৈর্ঘ্য কমবেশি করার জন্য সিলেকশন টুল দিয়ে সিলেক্ট করুন।
.যে কোন প্রান্তে পয়েন্টার এনে ড্রাগ করে বড়-ছোট করুন।
ভিডিও থেকে অডিও বাদ দেয়া
কোন কারনে ভিডিওর সাথে থাকা মুল অডিও বাদ দেয়া প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য ভিডিও ফাইল থেকে অডিওকে আগে পৃথক করে নিতে হয়।
.সিলেকশন টুল দিয়ে ক্লিপটি সিলেক্ট করুন।
.রাইট-ক্লিক করে মেনু থেকেSplitসিলেক্ট করুন।
.অডিও ট্রাকে অডিও সিলেক্ট করুন।
.ডিলিট কি চেপে মুছে দিন।
ট্রানজিশন ব্যবহার
ভিডিও ষ্টুডিও এর সাথে শতশত ট্রানজিশন ইফেক্ট রয়েছে। এছাড়া পৃথকভাবেও ইনষ্টল করে নেয়া যায়। এদেরকে পাওয়া যাবে প্রোডাকশন লাইব্রেরিতে, ট্রানজিশন অংশে।
এই ভার্শনে শুধূমাত্র ট্রানজিশন ট্রাকে ট্রানজিশন ব্যবহার করা যায়। কাজেই যে দুটি ক্লিপের মধ্যে ট্রানজিশন ব্যবহার করতে চান তাদেরকে এবং ট্রাকে রাখতে হবে।
.ক্লিপ দুটিকে এ এবং বি ট্রাকে এমনভাবে রাখুন যেন একটি অপরটির কিছু অংশ ঢেকে থাকে। যেমন ২ সেকেন্ড ট্রানজিশনের জন্য ২ সেকেন্ড।
.ট্রানজিশন লাইব্রেরী থেকে পছন্দমত ট্রানজিশনকে ড্রাগ করে এনে দুই ক্লিপের মাঝখানে ট্রানজিশন (Fx) ট্রাকে ছেড়ে দিন।
.ট্রানজিশনের নানারকম পরিবর্তন করে নিজের পছন্দমত করে নেয়া যায়। আপাতত সরাসরি ব্যবহার করুন।
ফাইনাল ভিডিও তৈরী
টাইমলাইনে সম্পুর্ন ভিডিও ঠিকমত সাজানো, অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেয়া, অডিও পরিবর্তন, ইফেক্ট ব্যবহার ইত্যাদি শেষ হলে ফাইনাল ভিডিও তৈরীর জন্য মেনু থেকেFile – Create – Video Fileকমান্ড দিন, (অথবা টুলবারেCreate Video Fileটুলে ক্লিক করুন।
ভিডিওর জন্য ফোল্ডার এবং ফাইলের নাম ঠিক করে দিন।
ওকে বাটণে ক্লিক করলে মুল ভিডিও তৈরী হতে থাকবে।
কিছু প্রযোজনীয় তথ্য
.অন্যান্য সফটঅয়্যারের মত এখানেও কাজ করার সময় প্রোজেক্ট ফাইল সেভ করে নেবেন।
.প্রোজেক্ট ফাইলে শুধুমাত্র নির্দেশ থাকে, সেখানে ভিডিও-অডিও ইত্যাদি তথ্য থাকে না। কাজেই এক কম্পিউটারে তৈরী প্রোজেক্ট ফাইল কপি করে অন্য কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে অন্য ফাইলগুলি একইভাবে কপি করতে হবে।
.টাইমলাইনে ব্যবহার করার পর কোন ক্লিপ মুছে দিলে কিংবা এক ফোল্ডার থেকে অন্য ফোল্ডারে সরালে তাকে টাইমলাইনে পাওয়া যাবে না। ফাইনাল ভিডিও তৈরীর আগে কোন ফুটেজ ফাইলের কোনধনের পরিবর্তন করবেন না।
.মুল ভিডিও তৈরী (রেন্ডারিং) সময় সাপেক্ষ। কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
ভিডিও ষ্টুডিও প্রো ব্যবহার করে প্রফেশনাল এডিটিং এর সব কাজই করা যায়। অন্যান্য কাজগুলি আগামী টিউটোরিয়ালে উল্লেখ করা হবে।
এই সফটঅয়্যারের সমস্যা একটিই, আপনাকে অবশ্যই উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করতে হবে। ভিসতা কিংবা ৭ ব্যবহারীরা এটা ব্যবহার করতে পারবেন না।
Home
Posts in Bangla
ভিডিওগ্রাফি টিউটোরিয়াল
ভিডিওগ্রাফি টিউটোরিয়াল: বিয়ের ভিডিও এডিটিং এর জন্য ইউলিড মিডিয়া ষ্টুডিও প্রো
- Blogger Comment
- Facebook Comment
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
0 comments:
Post a Comment