কল্পনার আড়ালে তুমি

স্থানীয় চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে অর্ক। প্রতিদিন বিকেল বেলা তার বন্ধুদের সাথে মিলে এখানে বিভিন্ন টপিক্স নিয়ে আড্ডা দেয়।
আড্ডা টপিক্সে কখনো দেশ,সমাজ বা কখনো এক এক জনের প্রেমের কাহিনী উঠে আসে।
ফ্রেন্ড চার্কেলে অর্কই সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। মেয়ে পটানোর সকল টিপস তার কাছে জানা আছে। তার সুবাদেই ফ্রেন্ড চার্কেলের সকলেই নিজ নিজ প্রেম কাহিনী নির্মানে ব্যস্ত।
কিন্তু অর্ক এখনো সিঙ্গেল।
তাত কারণ শুধু একটাই।
সে মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান। বাবার সামান্য টাকা বেতন আর মায়ের অসুস্থতার কারণে বেশ টানা হেঁছড়াই আছে সে। দু একটা টিউশনি করে কোন রকমে নিজের খরচ চালায় সে। এত সবের মধ্যে প্রেম....??
হুহ.. অসম্ভব. !!
তবে ফ্রেন্ডদের প্রেমালাপ দেখে মাঝেয়াঝে তার মনেও জিনিসটা উঁকি ঝুঁকি মারে।
সে ভাল কবিতাও লিখতে পারে।
যার কারণে দেখা যায় অনেক সময় ফ্রেন্ডদের জিএফ কে ম্যাসেজ পাঠানোর সময় সে সাহায্য করে অনেক সময় নিজেই সব লিখে পাঠায়। ইদানীং তার মাঝে উদাস উদাস একটা ভাব দেখা যায়।
তাদের কলেজে অর্পিতা নামক মেয়েটি ভর্তি হওয়ার পর থেকেই অর্কের এই অবস্থা।
অর্ক এখন আর আগের মতো ক্লাস ফাঁকি দেয়না। কারণ কলেজে থাকলে সে সর্বদা অর্পিতাকে দেখতে পায়।
বেশ গুছালো আর দুষ্টু প্রকৃতির মেয়েটা।
বন্ধু মহলে সকলেই তাকে বান্দরনি বলেই ডাকে।
সারাক্ষণ হাসা হাসিতে মাতিয়ে রাখে পুরো ক্লাস।
বড় লোকের এক মাত্র মেয়ে সে তার বাবা সরকারি চাকুরীজীবী হওয়াতে এখানে ট্রান্সফার হয়েছেন।
সারাক্ষণ হাসি খুশিতে থাকে সে। বিভিন্ন চকলেট এর প্রতি তার চরম নেশা। প্রতিদিন ব্যাগে করে চকলেট আনতে দেখা যায় তাকে। তার মায়া ভরা চেহারা দেখে যে কেউ প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যাবে। যার ব্যতিক্রম ঘটেনি অর্কের ক্ষেত্রেও। বেশ কয়েকবার সে অর্পিতার কাছে গিয়েও মনের কথা বলতে পারেনি তাকে। কারণ মূহুর্তেই তার মনে ধনী গরীবের পার্থক্য টা চলে আসে। যদি সে রিজেক্ট করে ??
*****
রীতিমত আজও বিকেলে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় সে তার মনের সব কথা তুলে ধরে। প্রায় সবাই তাকে এতে উৎসাহ প্রদান করে। কারণ ফ্রেন্ড চার্কেলে এক মাত্র অর্কই এখনো সিঙ্গেল।
আর মেয়ে পটানোর প্রায় সিব টিপস যেহেতু তার জানা আছে সুতরাং এতে পিছ পা হওয়ার কোন মানে হয়না !!
*****
পরদিন সকালে কিছু চকলেট আর একটি লাল গোলাপ হাতে কলেজের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে অর্ক।
ঐ তো রিক্সা থেকে নামছে অর্পিতা এদিক সেদিক না তাকিয়ে সোজা কলেজের দিকেই যাচ্ছে সে। অনেক কষ্টে হৃদপিন্ডের ধুক ধুক শব্দকে কন্ট্রোল করে হাত নেড়ে ডাক দিল অর্ক।
-- এই যে শুনছ. ?
-- জ্বী....???
কিছুটা অবাক চোখে পেছনে ফিরে তাকায় অর্পিতা।
-- আমি অর্ক। এই কলেজেই পড়ি সেকেন্ড ইয়ারে।
অর্পিতা ওর ফ্রেন্ড থেকে অর্ক সম্পর্কে আগে থেকেই অনেক কিছু শুনেছিল।
ওদের মতে অর্ক হচ্ছে কলেজে খুব ভাব নেওয়া একটা ছেলে। নয়লে কি এত অফার পেয়েও সে রিজেক্ট করতো ??
কিন্তু না তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে একেবারেই আলাদা।
-- অও আচ্ছা।
আমি অর্পিতা কলেজে নতুন ভর্তি হলাম, ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। কাঁপা কাঁপা হাতে গোলাপ আর চকলেট গুলো অর্পিতার হাতে ধরিয়ে দিয়েই ফ্রেন্ডরা ডাকছে বলে সেদিকে ছুটে যায় অর্ক।
অর্পিতা থ্যাঙ্কস দেওয়ার সুযোগ টাও পেলনা।
চকলেট গুলো দেখে মুচকি হাসছে সে। চকলেট যে আমার খুব প্রিয় , এই ছেলে সেটাও লক্ষ করেছে বুঝি ?
*****
জ্যোৎস্না রাত. !!
আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে অর্ক। পৃথিবীটা আসলেই খুব সুন্দর। খালি নিজ থেকে একটু সাজিয়ে নিতে হয়।
জীবনকে আজ বেশ উপভোগ করছে সে।
মনকে ধরে রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। অর্পিতাকে একটা কল করতে পারলে বেশ তৃপ্তি পেতে সে।
কিন্তু নাম্বার কিভাবে পাবে?
নাহ....
ব্যাপার ফ্রেন্ড চার্কেলে হাজার হলেও সবাই তাকে LoVe গুরু বলেই ডাকে।
অর্পিতার এক বান্ধবীর সাথে অর্কের এক ফ্রেন্ডের রিলেশন আছে। সেটাও অবশ্য অর্কের কারণেই সফল হয়েছিল।
ফোন দিল সেই ফ্রেন্ডকে যেভাবে হোক অর্পিতার নাম্বারটা জোগাড় কপ্রে দিতে হবে।
প্রায় আধঘণ্টা পর তার ফ্রেন্ড অর্পিতার নাম্বারটা ম্যাসেজে তাকে পাঠায়।
*****
ডিনার শেষে ছাদে উঠল অর্ক।
চাঁদটা আরো উজ্জল লাগছে। অর্পিতার নাম্বার এখন তার হাতেই। কিন্তু.....
কল করতে গিয়ে কোথায় যেন আটকে যাচ্ছে সে।
বুকের বাম পাশে ইতি মধ্যেই. DJ শুরু হয়ে গিয়েছে। একটা এম লাগাতে পারলে খারাপ হতনা। অনেক ধরনের সূর পাওয়া যেত।
নাহ থাক....
একটা ম্যাসেজ পাটায়।
-- Everybody needs someone who can make them laugh when they think that they'll never smile again.
-- LoVe me for a second, and I will make that second last a lifetime....!!!
একটু পর অর্কের মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো...
অর্পিতার ফোন. !!!
কোন ভাবে রিসিভ করে কিছুটা ভয়ে ভয়ে কানে লাগালো তার মোবাইল।
-- হ্যালো।
-- হ্যা....হ্যালো....
-- এই যে মশাই , এইসব ম্যাসেজ দিয়েই আপনার ফ্রেন্ডদের জিএফ পটাতেন বুঝি ???
কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় অর্ক।
কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা।
-- ইয়ে.... না.... মানে আমি আসলে........
ততক্ষণে ওপাশে হাসির রোল পরে যায়. !!
-- আচ্ছা থাক. !!
আর বুঝাতে হবেনা। আর চকলেট গুলো দেওয়ার জন্যে থ্যাঙ্কস।
-- ফুলটা ??
-- হুম .. ঐটার জায়গায় ঐটা আছে। তা আগামীকাল দেখা হচ্ছে তো ??
কথাটা শুনেই তিন সেকেন্ডের জন্যে একটা লুঙ্গি ড্যান্স দিয়ে নেয় অর্ক।
-- হ্যা... অবশ্যই, কলেজের রাস্তার সামনে দাঁড়াবো। সেখান থেকে কোথাও ঘুরতে যাবো।
বেশ দ্রুত ভাবে বলে দেয় অর্ক।
-- আচ্ছা বাই....
*****
রাত্রে ভাল ঘুম হয়নি অর্কের,,
আর আজকের রাতটাও কেমন জানি খুব বড় ছিল।
কলেজের পাশের চায়ের দোকানে ফ্রেন্ডদের আড্ডা দিচ্ছে সে।
সকল ফ্রেন্ড এক সাথে মিলে তাকে নিয়ে ফাইজলামি করছে আর সে লজ্জাই হাত পা গুটিয়ে বসে আছে।
কারণ এর আগে সেও এভাবে তার ফ্রেন্ডদেরকে জ্বালাতো। অর্পিতার কল পেয়ে পেছনে ফিরে তাকায় সে।
রিক্সাতে বসে আছে অর্পিতা। কলেজের এপ্রন পড়ে না আসাতে আজ তাকে অন্যরকম লাগছে।
নীল থ্রী-পিস হাত ভর্তি বিভিন্ন কালারের চুড়ি, এক কথায় যাকে ভয়ঙ্কর সুন্দর বলে আরকি।
-- আরে আর কতক্ষণ বসে থাকবো ?? হা করে কি দেখছ রিক্সায় উঠো ???
-- ওয়েট....
দৌঁড়ে গিয়ে বেশ কিছু চকলেট আর দুটি আইসক্রিম নিয়ে আসে অর্ক। রিক্সা ছুটে চলেছে আপন গতিতে। অর্পিতার সিল্কি চুল অর্কের মুখে এসে পড়ছে।
আলতো করে অর্পিতার হাতের ওপর হাত রাখলো অর্ক। প্রথম বারের মতো ভালবাসার মানুষের হাতের ছোঁয়া। জীবনের পূর্ণতা হয়তো এখানেই নিহিত রয়েছে।
বাকি জীবনটাও এভাবে ভালবাসার পরশে মাখিয়ে নিতে চায় তারা. !!!
Share on Google Plus

About K. M. Emrul Hasan

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment