কিউট একটা ভালবাসার গল্প

ক্লাস টেনে এক সুন্দরীর কাছে ছ্যাক খাওয়ার পর আর প্রেম করা হয়ে ওঠে নি।এডমিশনের জন্য কোচিং করছিলাম।ব্যাচে ছেলেদের সাথে মেয়েও ছিল কিছু। এই কিছু মেয়েদের মধ্যে একজনকে বেশ কিছুদিন থেকেই লক্ষ্য করছিলাম।মেয়েটাএকটু মোটা কিন্তু অনেক সুইট।বিশেষ করে যখন হাসছে তখন মনে হচ্ছে, না না আর দেরি করলে চলবে না,এক্ষুনি যেয়ে ওকে "লাভ ইউ" বলতে হবে।পাছে অন্য কেউ আবার প্রোপোজ করে ফেলে!! সেদিনের কথা শুনুন- ও বসেছে লাস্ট বেঞ্চের সামনেরটায়,আমি তার পিছনের টাতে বসলাম।তখনো ভাইয়া (যিনি পড়ান) আসে নি।সবাই গল্প গুজব করছে।আমি একটা চিরকুট লিখে ওকে দিলাম। -এই মেয়ে,তোমার নাম টা যেন কি? (দিয়ে ভয়ে কাঁপছিলাম,কিন্তু ওর মুখে কিঞ্চিত হাসির আভাস,ও চিরকুটের অপর পাশে লিখল) -ফারিহা,তোমার নাম তো ফরহাদ।তাই না? (আমি আনন্দে পনের বিশ খানা হয়ে আরেকটা চিরকুট লিখলাম।ততক্ষনে ভাইয়া এসেছেন।পড়ানোও শুরু করেছেন) -হ্যা।আমার নাম ফরহাদ।আমার খবর তো দেখছি ভালোই রাখো,পছন্দ করো নাকি আমাকে । -নাম জানলেই কি পছন্দ করতে হবে।কি যে বল না। -নামের কথা টা বাদ দিলাম,এই যে চুপিচুপি চিরকুট চালাচালি করছ,তাতে কি প্রমান হয়? -আচ্ছা!!তোমার চিরকুটের উত্তর দেয়া তাহলে আমার ভুল হয়েছে তাই না? (ওর সেই কিঞ্চিত হাসি প্রসারিত হচ্ছে) -আরে নাহ মাইন্ড করলা নাকি।ফান করছিলাম।আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখবা? -আগে শুনি কি তোমার রিকোয়েস্ট? -তুমি সকাল সন্ধ্যা ১+১=২ কিলো হাঁটবা?তাহলে তোমার ফ্যাট টা কিছুটা কমত।তখন তোমার সাথে আমাকে মানাত।আমি তো হ্যাংলা,অনেক চেষ্টা করেও মোটা হতে পারি নি।আমি হচ্ছি কন্সট্যান্ট।নো চেঞ্জ। (ফ্যাটের কথাটা ওকে একটু রাগানোর জন্য বলেছিলাম,ওকে আমার এমনিতেও অসম্ভব ভাল লাগতে শুরু করেছিল।হিতে বিপরীত হল।আমার চিরকুট পেয়ে ও হাসিতে ফেটে পরল,ক্লাস চলছে তাও ভুলে গেলো) ক্লাসের ভাইয়া আমাদের কাছে আসলেন,সব চিরকুট পড়লেন।তারপর তিনিও হাসতে শুরু করলেন।বললেন -আজকে তোমাদের দুজনের ছুটি। এই বলে আমাদের দুজনকে ক্লাস থেকে বের করে দিলেন,হাসি মুখেই দিলেন।আমরা দুজনেই লজ্জায় লাল।ও একটু বেশী লাল হয়েছিল। বড় রাস্তার সাইড দিয়ে হাঁটছি দুজনে।আমার কাছে ৫ টাকা ছিল,সিগারেট খাওয়ার জন্য,ওটা দিয়ে বাদাম কিনেছি।মাঝে মাঝে ভালোই টাকা থাকে,আজকে নেই। হাঁটতে হাঁটতে অনেক কথা হল,ওর ছোটভাই ক্লাস সিক্সে পড়ে,বাবা ব্যাংকে চাকরী করে,মা গৃহীণি... এসব আর কি। আমিও আমার কথা বললাম।তারপর ও বলল বাড়ি যেতে হবে আর সে চায় আমি যেন তাকে কিছু দূর এগিয়ে দিই।পরলাম বিপদে টাকা তো সাথে নেই।কি করি? নির্লজ্জের বলেই ফেললাম- -শোন,আমার কাছে আর টাকা নেই এখন।আমি মনে হয় যেতে পারছি না আজ।সিগারেটের জন্য ৫ টাকাই ছিল। -যেতে পারছি না মানে,আমার কাছ থেকে ধার নাও,পরে দিয়ে দিও। -হা হা হা,হ্যা তাহলে যাওয়া যায়। রিক্সায় কিছু কথা হল,তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কথা হল এটা__: ও বলল- -প্রতিদিন ১ কিলো হাঁটলে হবে না।সকালে হাফ সন্ধ্যায় হাফ। (বলেই মুখটা ঘুরিয়ে নিল,আমি কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম ওর দিকে,তারপর ওর হাত টা ধরে বললাম) -না হাঁটলেও হবে।আমি তোমাকে রাগানোর জন্য বলেছিলাম। -তাহলে আমার একটা রিকোয়েস্ট রাখ,তুমি সিগারেট টা ছেড়ে দাও। আমি কিছু বললাম না।নাম্বার এক্সচেঞ্জ করলাম।ওকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে এলাম।জীবনের প্রথম ঋণ হল ৫০ টাকা। সিগারেট ছেড়ে দেয়ার রিকোয়েস্ট গার্লফ্রেন্ডই করুক আর যেই করুক, এই রিকোয়েস্ট রাখা মনে হয় ছেলেদের জন্য একটু কষ্টসাধ্য।মিথ্যে বলে লাভ নেই,আমি পুরোপুরি পারি নি।ও কিন্তু আমার ছেলেখেলার রিকোয়েস্ট রাখলো।মাঝে মাঝে ফোন করলে ওর ছোটভাই বলত,"ভাইয়া, আপু তো হাঁটতে গেছে" তখন বেশী করে উপলব্ধি করতে পারতাম,ও আসলে আমাকে কতটা ভালোবাসে। আমরা রিছেন্টলি বিয়ে করলাম,রিছেন্টলিচাকরী পেয়েছি তো তাই সাড়ে চার বছর প্রেমের পর বিয়ে।অথচ এখনো মনে হচ্ছে প্রেম করছি,বিয়ে হয় নি। আমি সিগারেট ছাড়তে পারি নি,তবে যেদিন সিগারেট খাই সেদিন ও আমাকে হামি দেয় না।তাই সিগারেটের অভ্যাস অনেকটা কমে গেছে।আজ খাইনি। আমি বসে বসে গল্পটা লিখছি আর ও আমার কাঁধে থুতনি লাগিয়ে বসে আছে।মাঝে ঠোঁট দিয়ে আমার গালে চিমটি কাটছে। ।
Share on Google Plus

About K. M. Emrul Hasan

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment