অল্প বিনিয়োগে প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসা - ৫

বিনিয়োগ কম অথচ লাভজনক এবং স্থায়ী ব্যবসা করার জন্য কম্পিউটার ট্রেনিং আদর্শ হতে পারে। আপনার চারিদিকে একবার দৃষ্টি দিন। ক্রমেই আরো বেশি মানুষ কম্পিউটার ব্যবহার করছে। আরো বেশি মানুষ কম্পিউটার ব্যবহার করবে। যারা নিয়মিত কম্পিউটার ব্যবহার করছে তাদের দিকে আরেকবারভালভাবে দৃষ্টি দিন। অনেকেই জানেন না ফাইল কিভাবে কপি করতে হয়, একটি চিঠি টাইপ করে কিভাবে প্রিন্ট করতে হয় কিংবা ইমেইল পাঠাতে হয়। এবারে চারিদিকের সুযোগ সুবিধের দিকে একবার দৃষ্টি দিন। ব্যক্তিগতভাবে কারো যদি মনে হয় তিনি কোথাও গিয়ে ইন্টারনেট এবং ইমেইল ব্যবহার শিখবেন দুদিনের কোর্স করে, সে ব্যবস্থা কি আছে ? হয়ত খোজ করলে যায়গা পাওয়া যাবে। স্বাভাবিক উত্তর, এমন প্রতিস্ঠান নেই যারকথা সবাই জানে, যেখানে গিয়ে সাধারন বিষয়গুলি শেখা যায়। অথচ এই সাধারন বিষয়গুলি আপনি জানেন। তাহলে একে ব্যবসার সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করবেন না কেন ? ব্যবসার সম্ভাবনা ট্রেনিং ব্যবসার সম্ভাবনা অপরিসীম। কম্পিউটারের হাতেখড়ি থেকে শুরু করে গ্রাফিক ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, প্রোগ্রামিং সবকিছুই। অধিকাংশ কম্পিউটার শিক্ষা প্রতিস্ঠান বিভ্রান্ত হয় একারনেই। ধরে নেয়া হয় সবাই ফটোশপ কিংবা প্রিমিয়ার কিংবা ম্যাক্স শিখবে। একসময় ঢাকা শহরে অলিতে গলিতে মাল্টিমিডিয়া স্কুল, আইটি প্রতিস্ঠান গড়ে উঠেছিল, একেএকে সবাই ঝড়ে গেছে। লক্ষ্য করেছেন কি কিছু প্রতিস্ঠান, যারা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড শেখায় সেগুলি ভালভাবেই ব্যবসা করছে। আয় করা ব্যবসার প্রধান লক্ষ্য। আপনি দশজনের কাছে ১০ হাজার টাকা করে নিয়ে ১ লক্ষ টাকা আয় করতে পারেন, ১০০ জনের কাছে ১ হাজার টাকা নিয়েও ১ লক্ষ টাকা আয় করতে পারেন। কম্পিউটারের ক্ষেত্রে সামান্য বিষয় শেখার প্রয়োজন বেশি। কম খরচে, নিষ্ঠার সাথে শেখানোর চেষ্টা করলে জনপ্রতি বেশি টাকা হয়ত পাওয়া যাবে না, সবমিলিয়ে যা পাওয়া যাবে সেই পরিমান বিশাল। কি শেখাবেন হয়ত লক্ষ্য করেছেন সাধারন বিষয় শেখানোর দিকে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। কম্পিউটার ব্যবহারের সাধারন নিয়ম থেকে শুরু করে ওয়ার্ড প্রসেসিং, ইন্টারনেট-ইমেইল ব্যবহার, এন্টিভাইরাসের মত ইউটিলিটি ব্যবহার ইত্যাদি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ন। স্কুলগুলি কম্পিউটার বিষয়ে যা পড়ানো হয় সেগুলি যেমন লক্ষ্য করতে পারেন তেমনি সাধারন কম্পিউটার অপরেটরের যে কাজগুলি করতে হয় সেদিকেও দৃষ্টি দিন। ওয়ার্ড প্রসেসিং শেখানোর সময় চিঠিপত্র-রিপোর্ট লেখা, ভুল সংশোধন করা, ঠিকভাবে সাজানো এসব বিষয়য়ের ওপর জোর দিন এবং এইকাজগুলি করার যোগ্য করে তুলুন। কেউ ডিজাইনে বেশি আগ্রহ দেখালে তাকে ফটোশপ-ইলাষ্ট্রেটর ক্লাশে ভর্তি করান। ওয়ার্ডে রঙচঙা কাজ শিখিয়ে সময় নষ্ট করবেন না। কাজের পদ্ধতি কি কি শেখাবেন সেগুলি কাগজে কলমে লিখে কোর্সের পরিচিতি তৈরী করুন। প্রতিটি কোর্সে কি শেখানো হবে, কতদিন কতগুলি ক্লাশ নেয়া হবে, কোন ক্লাশে কি শেখানো হবে সেগুলি নির্দিষ্ট ভাবে শিক্ষার্থীকে জানান। এতে তাদের পক্ষে প্রস্তুতি নেয়া যেমন সহজ হয় তেমনি একই ক্লাশ দুবার নেয়া প্রয়োজন হয় না। বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে, শিক্ষার্থী এক ক্লাশ করার সময় আগের ক্লাশের বিষয় ভুলে যান। তাকে স্মরন করিয়ে দিন, যেদিন যা শেখানোর কথা সেদিন সেটাই শেখানো হবে। শেখানো যেমন আপনার দায়িত্ব শেখাও তেমনি তার দায়িত্ব। প্রতিটি বিষয়ের জন্য কোর্স মেটেরিয়াল তৈরী করে নিন। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দিতাসহ অন্যান্য কারনে কারনে শিক্ষার্থীকে এগুলি দেয়া হয় না। সেক্ষেত্রে অন্তত প্রশিক্ষকের গাইডলাইন হিসেবে সেটা ব্যবহার করুন। অন্য আয়ের সুযোগ আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইন শেখান স্বাভাবিকভাবেই গ্রাফিক ডিজাইন কাজ করার উপযোগি সবকিছু থাকবে। ছাত্রদের মধ্যে অনেক ব্যবসায়ী-চাকুরীজীবি পাবেন যাদের কাজ করানো প্রয়োজন। ট্রেনিং এর পাশাপাশি এধরনের কাজ করলে একইসাথে আয় এবং পরিচিতি বাড়বে। শিক্ষার্থীদের এরসাথে সম্পৃক্ত করলে একদিকে কম খরচে বেশি কাজ করার সুযোগ পাবেন অন্যদিকে তারাও বাস্তব কাজ করে শেখার সুযোগ পাবে। তারা নিজেরাই প্রচারে সাহায্য করতে পারে। কি বিনিয়োগ প্রয়োজন বর্তমানে খুব কমদামে কম্পিউটার কেনা যায়। ৪টি বা ৮টি কম্পিউটার কিনে ট্রেনিং সেন্টার চালু করা খুব কঠিন কাজ হবে না। এমনকি দুটি কম্পিউটার ব্যবহার করে নিজের বাড়িতেই শেখানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব। কম্পিউটার ট্রেনিং ব্যবসায় মুলধন হচ্ছে আন্তরিকতা নিয়ে শেখানো। শিক্ষার্থী শেখার পর যে কাজ করবেন সেকাজ যেন ঠিকভাবে করতে পারেন সেভাবে তাকে তৈরী করা। এই মুলনীতি ঠিক থাকলে ক্রমেই ব্যবসার প্রসার ঘটবে।
Share on Google Plus

About K. M. Emrul Hasan

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment