ফটোগ্রাফি টিউটোরিয়াল: ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরা ব্যবহারের নিয়ম

যারা পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরা ব্যবহারে অভ্যস্থ তারা সাধারনত এসএলআর ক্যামেরাকে কিছুটা ভীতির চোখে দেখেন। ভাবেন সেটার ব্যবহার হয়ত জটিল। বাস্তবে এসএলআর ক্যামেরাকে আপনি ব্যবহার করতে পারেন পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরার মতই। উন্নত ক্যামেরার কারনে পাবেন ভাল মানের ছবি। সেইসাথে সামান্য কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখলে দক্ষতার সাথে ব্যবহার করে উচুমানের ছবি পাবেন। ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরা ব্যবহারের সাধারন নিয়মগুলি এখানে শেখানো হচ্ছে। উদাহরন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে নাইকন ডি-৯০, তবে যে কোন এসএলআর ক্যামেরার ক্ষেত্রে এই একই নিয়ম প্রযোজ্য। প্রথমে ক্যামেরার অংশগুলি একবার দেখে নেয়া যাক। ডিজিটাল এসএলআর ক্যামেরার প্রধান বৈশিষ্ট এতে এলসিডি ডিসপ্লে ছাড়াও রয়েছে অপটিকাল ভিউফাইন্ডার। এর মাধ্যমে আপনি যা দেখতে পান সেটা দেখা যায় লেন্সের ভেতর দিয়ে। একটি আয়নার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়ে ভিউফাইন্ডারের মাধ্যমে দেখা যায়। সেকারনেই নাম এসএলআর (সিংগেল লেন্স রিফ্লেক্ট)। অন্যদিকে পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরায় যে ইলেকট্রনিক ভিউফাইন্ডার থাকে সেটা লেন্সের ভেতর দিয়ে আসে না, সেটা পৃথকভাবে দেখার ব্যবস্থা। দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য থাকার সম্ভাবনা থেকে যায়। লেন্সের ভেতর দিয়ে দেখার সুবিধে হচ্ছে একেবারে নিখুত দৃশ্য দেখার সুযোগ। ক্যামেরার নির্মাতা বলেন এলসিডি ডিসপ্লে ব্যবহার যদিও কখনো কখনো সুবিধেজনক (বিশেষ করে ভিডিও করার সময়) তাহলেও সেটা শতভাগ নিখুত না, ভিউফাইন্ডার নিখুত। কাজেই এসএলআর ক্যামেরা ব্যবহারের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আপনি ভিউফাইন্ডার ব্যবহার করবেন এটাই স্বাভাবিক। দ্বিতীয় পার্থক্য হচ্ছে মেইন কন্ট্রোল ডায়াল এবং কন্ট্রোল সাব-ডায়াল। সাটার রিলিজ বাটনের সামনে এবং ক্যামেরার পেছনে যে দুটি হুইল রয়েছে এই দুটি। এপারচার, সাটারস্পিড সহ যে কোন পরিবর্তনের জন্য এদুটি ঘুরাতে হয়। এদের অবস্থান এমনই যে সাটার রিলিজ বাটনের ওপর একটি আঙুল রেখে সহজে ঘুরানো যায়। তৃতীয় বড় পার্থক্য হচ্ছে জুম রিং। লেন্সের বিশেষ অংশ ঘুরালে জুম কমবেশি হয়। ফলে খুব দ্রুত জুম পরিবর্তন করা যায়। এছাড়া একই পদ্ধতিতে ঘুরিয়ে ফোকাস করার জন্য রয়েছে ফোকাস রিং। ম্যানুয়েল ফোকাস করার সময় এটা ব্যবহার করা হয়। ব্যবহার পদ্ধতি আপনি ক্যামেরাকে একেবারে পয়েন্ট এন্ড শ্যুট ক্যামেরার মত ব্যবহার করতে চান। এজন্য রয়েছে অটোমোড। মোড ডায়ালে সবুজ রঙের চিহ্নকে ঘুরিয়ে পয়েন্টারের কাছে আনুন। এখন যার ছবি উঠাতে চান সেদিকে ক্যামেরা তাক করুন। সাটার রিলিজ বাটন অর্ধেক নামিয়ে আনুন, ফোকাস হবে। পুরো চাপ দিন ছবি উঠবে। যদি আলো কম থাকে ফ্লাশ নিজে থেকেই খুলে যাবে এবং জ্বলবে। মুহুর্তেই আপনি বুঝে যাবে সাধারন ক্যামেরা থেকে এসএলআর এর পার্থক্য কোথায়। এতে ফোকাস হবে খুব দ্রুত, উড়ে যাওয়া পাখিকেও ফোকাস করে ছবি উঠানো সম্ভব। বিভিন্ন মোড ব্যবহার আপনি কখনো সামনে দাড়ানো মানুষের ছবি উঠাবেন (পোর্ট্রেট) কখনো খোলা মাঠ-আকাশের ছবি উঠাবেন (ল্যান্ডস্কেপ) কখনো কাছ থেকে ফুলের ছবি উঠাবেন (ক্লেজআপ)। ছবি উঠানোর আগে মোড ডায়াল ঘুরিয়ে কখনো মুখের ছবি, কখনো পাহাড়ের ছবি, কখনো ফুলের ছবি দেখে নির্দিস্ট মোড ব্যবহার করুন। ক্যামেরা নিজেই সঠিক এপারচার, সাটারস্পিড ইত্যাদি ঠিক করে নেবে। কাজেই ব্যবহারের দিক থেকে এপর্যন্ত কম্প্যাক্ট ক্যামেরা থেকে এসএলআর ক্যামেরার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এপারচার এবং সাটারস্পিড মোড দক্ষ ফটোগ্রাফাররা এই দুটি মোড ব্যবহার করেন সবচেয়ে বেশি। এপারচার প্রায়োরিটি মোডে তিনি এপারচার কত হবে ঠিক করে দেন (এপারচার পরিবর্তন করলে কিকি পরিবর্তন হয় সেকথা জানানো হয়েছে অন্য টিউটোরিয়ালে)। তারসাথে মিল রেখে সঠিক সাটারস্পিড ঠিক করে নেয় ক্যামেরা। বিপরীতভাবে সাটার স্পিড মোডে আপনি সাটার স্পিড ঠিক করে দেবেন, ক্যামেরা নিজেই তারসাথে মানানসই এপারচার ঠিক করে নেবে। আপনার দায়িত্ব আপনি কোন মোড ব্যবহার করবেন সেটা ঠিক করা। আকাশে উড়তে থাকা পাখির স্পষ্ট ছবি কিংবা দ্রুত গতিশীল কিছুকে স্থির দেখানোর জন্য আপনার বেশি সাটার স্পিড প্রয়োজন, কাজেই আপনি সাটারস্পিড নিজে ঠিক করে দেবেন। আবারও, কখন কোন মোডে ছবি উঠাবেন সে সম্পর্কে অন্য টিউটোরিয়ালে লেখা হয়েছে। এপারচার প্রায়োরিটি মোডে ছবি উঠানোর জন্য মোড ডায়াল ঘুরিয়ে এপারচার মোড (A) সিলেক্ট করুন। ফোকাস করুন। ভিউফাইন্ডার (অথবা ডিসপ্লে) বর্তমানের এপারচার সেটিং দেখাবে। সেটা পরিবর্তনের জন্য সামনের দিকের কমান্ড ডায়াল ঘুরান। একদিকে ঘুরালে এপারচার বাড়বে, বিপরীত দিকে ঘুরালে এপারচার কমবে। পছন্দমত এপারচার সেট করার পর ছবি উঠান। সাটারস্পিড মোডে ছবি উঠানোর জন্য সাটার স্পিড মোড (S) সিলেক্ট করুন, ফোকাস করুন, পেছনের দিকের কমান্ড ডায়াল ঘুরিয়ে সাটার স্পিড পরিবর্তন করুন এবং ছবি উঠান। ম্যানুয়েল মোড ম্যানুয়েল মোড হচ্ছে যেখানে আপনি এপারচার এবং সাটার স্পিড দুটিই নিজে ঠিক করে দেবেন। অর্থাত আপনি জানেন এপারচার এবং সাটারস্পিড কত রাখলে ভাল ছবি পাওয়া যাবে। ম্যানুয়েল মোড (M) সিলেক্ট করুন, আগের পদ্ধতিতে সামনের এবং পেছনের ডায়াল ব্যবহার করে এপারচার এবং সাটার স্পিড পরিবর্তন করুন। ছবি উঠান। এটুকু জেনে আপনি দক্ষতার সাথে এসএলআর ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারেন। আপনার ক্যামেরা মডেলের সাথে এই ক্যামেরার (নাইকন ডি-৯০) পার্থক্য থাকলে ক্যামেরার ম্যানুয়েল থেকে পার্থক্য সম্পর্কে জেনে নিন।
Share on Google Plus

About K. M. Emrul Hasan

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment